বাজেট বলতে বুঝায় পরিকল্পনার সংখ্যাত্বক প্রকাশ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আয় ও ব্যয়ের পূর্ব পরিকল্পনার সংখ্যাত্বক প্রকাশই হচ্ছে বাজেট। নির্দিষ্ট সময় বলতে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা বার্ষিকও হতে পারে। পারিবারিক বাজেট বলতে বুঝায় পরিবারকেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অর্থাৎ পরিবারের আয়ের উৎস এবং চাহিদার ভিত্তিতে ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে যে পূর্বপরিকল্পনা করা হয়, তাকেই পারিবারিক বাজেট বলা হয়। বাজেট প্রণয়ন করার মাধ্যমে পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর আনা হয়, যাতে করে আয়ের অতিরিক্ত ব্যয়ের কোনো সুযোগ না থাকে। নির্দিষ্ট কাঠামোর ভিতর অর্থাৎ বাজেটের মাধ্যমে পারিবারিক হিসাব-নিকাশ পরিচালনা করতে পারলে নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যেই সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব।
পারিবারিক বাজেট তৈরির জন্য কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব হবে, যদি নির্ধারিত নিয়মনীতি মেনে বাজেট প্রস্তুত করা হয়। পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ-
১। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির তালিকা প্রস্তুতকরণ : যে সময়ের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে, যে সময়ে পরিবারের সদস্যদের কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যের তালিকা নিয়ে তার মধ্যে থেকে প্রয়োজন ও চাহিদার গুরুত্ব অনুসারে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।
২। মূল্য নিরূপণ : তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি দ্রব্য বা সেবাকার্যের মূল্য জেনে নিয়ে একত্রে মোট মূল্য বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩। সম্ভাব্য আয় নির্ধারণ : পারিবারিক বাজেটে সাধারণত আয়ের উপর ভিত্তি করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। সেই জন্য বাজেটকে কার্যকরী করতে হলে সম্ভাব্য আয়ের সকল উৎস সঠিকভাবে চিহ্নিত করে মোট আয় বাজেটে উপস্থাপন করতে হয়।
৪। বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা : প্রতিটি পরিবারেই বাজেটের মূল লক্ষ্য সীমিত আয়ের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করা। বাজেট প্রণয়ন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে আয়-ব্যয়ের মধ্য যেন ভারসাম্য বজায় থাকে অর্থাৎ ব্যয় যেন আয়ের চেয়ে বেশি না হয় ।
৫। যুগোপযোগী বাজেট প্রণয়ন : পারিবারিক বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন তা বাস্তবধর্মী এবং যুক্তিসংগত হয়। তাছাড়া বাজেট নমনীয় হতে হবে, যাতে করে বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনো একটি খরচ বেড়ে গেলে অন্য একটি খরচ কমানো যায়।
একটি সার্থক বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর। পরিবারের গঠন, আকৃতি, পরিবারের আয়, সদস্যের রুচিবোধ, সামাজিক পরিচিতি ইত্যাদি উপাদানগুলো সক্রিয়ভাবে বাজেট প্রণয়নের সময় বিবেচনায় রাখতে হয়। তাছাড়া প্রতিটি পরিবারের বাজেট একরকম এবং একই মানে তৈরি করা সম্ভব হবে না। মোট কথা হলো আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য থেকেই একটি পারিবারিক বাজেট তৈরি হয়। ব্যয়ের খাতওয়ারি বণ্টন নির্ভর করবে পারিবারিক কাঠামোর উপর। যেমন- খাদ্য খাতে শতকরা ২০%-২৫%, বস্ত্রখাতে ৫%-১০%, বাসস্থান খাতে ৩০%-৪০%, শিক্ষাখাত ১০%-১৫%, যানবাহন ১৫%-২০% খরচ করা যেতে পারে (আনুমানিক)। নিচে একটি পারিবারিক বাজেটের নমুনা দেওয়া হলো
আরও দেখুন...